লজিক গেইট কি? লজিক গেইটের প্রকারভেদ
লজিক গেইট কি
গেইট বলতে আমরা বুঝি যার মাধ্যমে আসা যাওয়া করা যায়। লজিক একটি ইংরেজি শব্দ। এর অর্থ যুক্তি। সুতরাং যুক্তি নির্ভর যে গেইট, তাকে লজিক গেইট বলে। কম্পিউটারের সকল কাজকর্ম করা হয় বুলিয়ান অ্যালজেবরার গাণিতিক অপারেশন দ্বারা। গাণিতিক অপারেশনগুলোকেই লজিক গেইটের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।বুলিয়ান অ্যালজেবরার গাণিতিক কাজকর্ম ইলেকট্রিক সার্কিটের মাধ্যমে এক বা একাধিক ইলেকট্রিক সার্কিটের সমন্বয়ে তৈরী ডিভাইস যার মাধ্যমে উপযুক্ত বৈদ্যুতিক পরিবেশে এক বা একাধিক ইনপুট দিয়ে একটি আউটপুট পাওয়া যায়। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে এ গেইটগুলো রিলে যন্ত্রের সাহায্যে তৈরী করা হতো। আধুনিক আইসি (ইন্ট্রিগেটেড সার্কিট) প্রযুক্তিতে সব রকম ডিজিটাল গেইট আইসি হিসেবে তৈরী করা হয়।
লজিক গেইটের প্রকারভেদ:
লজিক গেইটগুলো তৈরী হয়েছে গাণিতিক অপারেশনের উপর ভিত্তি করে। দশমিক পদ্ধতিতে যেমন- যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি গাণিতিক অপারেশন আছে। বুলিয়ান অ্যালজেবরার তা নেই। বুলিয়ান অ্যালজেবরায় গাণিতিক অপারেশনগুলো সম্পাদন করা হয় মূলত তিনটি গাণিতিক অপারেশন দ্বারা। এগুলো হল যোগ, গুণ ও পূরক। এছাড়া অন্য সব গাণিতিক অপারেশন সম্পাদন করা হয় উল্লিখিত তিনটি গাণিতিক অপারেশনের সমন্বয়ে বা মিশ্রনে। যেমন বিয়োগ করা হয় যোগ ও পূরক ব্যবহার করে। এ কারণে লজিক গেইটকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- মৌলিক গেইট
- যৌগিক গেইট
১. মৌলিক গেইট:
এ গেইটগুলো এককভাবে গাণিতিক অপারেশনে সম্পাদন করতে পারে। যৌক্তিক যোগ, যৌক্তিক গুন ও যৌক্তিক পুরকের জন্য তিনটি মৌলিক গেইট আছে। তিন প্রকার মৌলিক গেইট গুলো হল:
- অর গেইট (OR gate): যৌক্তিক যোগের জন্য।
- এ্যান্ড গেইট (AND gate): যৌক্তিক গুণের জন্য।
- নট গেইট (NOT gate): যৌক্তিক পূরকের জন্য।
২. যৌগিক গেইট:
দুই বা ততোধিক মৌলিক গেইটের সমন্বয়ে যে গেইট তৈরি হয়, তাকে যৌগিক গেইট বলা হয়। এগুলো হলো-
- ন্যান্ড গেইট (NAND gate): AND গেইটের ও NOT গেইটের সমন্বয়ে তৈরি।
- নর গেইট (NOR gate): OR গেইটের ও NOT গেইটের সমন্বয়ে তৈরি। এক্স-অর (X-OR gate): অর, এন্ড কিংবা নট গেইট দিয়ে এ গেইট তৈরি করা যায়।
- এক্স-নর গেইট (X-NOR gate): এক্স-অর গেইটের সাথে NOT গেইট মিলিয়ে তৈরি হয়।
বিভিন্ন প্রকার গেইটের বিবরণ: নিম্নে তিন প্রকার মৌলিক গেইটের বর্ণনা দেয়া হলো-
অর গেইট:
বুলিয়ান অ্যালজেবরার যোগের কাজ সম্পাদনের জন্য যে লজিক গেইট করা হয়, তাকে OR গেইট বলা হয়। এ গেইটে দুই বা দু'য়ের অধিক ইনপুট থাকে এবং আউটপুট থাকে একটি। এ গেইটে দুই বা ততোধিক সুইচ সমান্তরালে থাকে।
চিত্রে অর গেইটের সমান্তরাল সুইচিং সার্কিট দেখানো হয়েছে। এতে যে কোন একটি সুইচ অন (1) হলে বাল্বটি প্রজ্জ্বলিত হয়। অর গেইটের বীজগণিতীয় ফাংশন হলো X = A+B। যেখানে A ও B হলো OR গেইটের ইনপুট।
এখানে + (প্লাস) দিয়ে OR (অথবা) ক্রিয়া বুঝানো হয়েছে। A বা B যেকোন একটির মান 1 (সত্য) হলে আউটপুট X = 1 (সত্য) হবে, অন্যথায় ০ (মিথ্যা) হবে
অ্যান্ড গেইট:
বুলিয়ান অ্যালজেবরার গুণনের কাজ সম্পাদনের জন্য যেলজিক গেইট ব্যবহার করা হয়, তাকে AND গেইট বলা হয়। এ গেইটে দুই বা দু'য়ের অধিক ইনপুট এবং একটিমাত্র আউটপুট থাকে। যে কোন একটি ইনপুট মিথ্যা (০) হলে আউটপুট মিথ্যা (০) হবে। সবগুলো ইনপুট সত্য (১) কেবল তখনই আউটপুট সত্য (১) হবে। যদি দু'টি ইনপুট A এবং B হয় তাহলে এর আউটপুট হবে, X = A.B। এক্ষেত্রে ইনপুট A=1 এবং B=1 হলে কেবল আউটপুট X=1 হবে। চিত্রে অ্যান্ড গেইটের সুইচ সার্কিট দেখানো হয়েছে। উভয় সুইচ অন হলে বাল্বটি প্রজ্জ্বলিত হয়।
দুই ইনপুটের অ্যান্ড গেইটের ক্ষেত্রে বাল্বটির চারটি অবস্থা (সুইচিং সার্কিট এর ক্ষেত্রে) হতে পারে:
(i) A ও B অফ থাকলে X অফ থাকবে
(ii) A অফ ও B অন থাকলে X অফ থাকবে
(iii) A অন ও B অফ থাকলে X অফ থাকবে
(vi) A ও B অন থাকলে X অন থাকবে
নট গেইট
বুলিয়ান অ্যালজেবরার পূরকের কাজ সম্পাদনের জন্য যে লজিক গেইট ব্যবহার করা হয়, তাকে NOT গেইট বলা হয়। এ গেইটে একটি ইনপুট ও একটি আউটপুট থাকে। আউটপুট ইনপুটের বিপরীত বিধায়, এ গেইটকে ইনভার্টার (Inverter) বলা হয়। এ গেইটে ইনপুট 1 (সত্য) হলে আউটপুট ০ (মিথ্যা), আর যদি ইনপুট ০ (মিথ্যা) হলে আউটপুট 1 (সত্য) হয়। ইনপুট যদি A হয় তাহলে আউটপুট X = A বা A' (A এর উল্টো)। সমীকরণ, X = NOT (A) = A